Friday, March 8, 2013

‘২৫শে মার্চের মধ্যে স্বাধীনতা দেয়া না হলে আমি ও শেখ মুজিব একযোগে আন্দোলন করব—আমরা প্রধানমন্ত্রী হতে যাব না। কারও বাপের শক্তি নাই স্বাধীনতা ঠেকায়

একাত্তরের ৯ মার্চ ঢাকা মহানগরী ছিল মিছিল ও সমাবেশে উত্তাল। শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগে স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা প্রশাসন। স্বাধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাইকোর্ট, জেলাকোর্টসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে হরতাল পালিত হয়। মার্চের একেকটি দিন যাচ্ছিল আর বীর জনতার একেকটি নতুন ইতিহাস রচনা হচ্ছিল।

একাত্তরের এই তারিখে (৯ মার্চ) মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পল্টন ময়দানে ন্যাপের বিশাল জনসভায় ২৫ মার্চের মধ্যে বাংলার স্বাধীনতা দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘২৫শে মার্চের মধ্যে স্বাধীনতা দেয়া না হলে আমি ও শেখ মুজিব একযোগে আন্দোলন করব—আমরা প্রধানমন্ত্রী হতে যাব না। কারও বাপের শক্তি নাই স্বাধীনতা ঠেকায়। মওলানা বলেন, আর গুলি চালিয়ে লাভ নাই। আমেরিকার ষড়যন্ত্রে ইন্দোনেশিয়া ১৭ লাখ মানুষকে হত্যা করে সমুদ্রের পানি লাল করেছে। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়, রক্তের পুরস্কার হাসিল তারা করবেই। ৭ কোটি মানুষকে হত্যা করা যাবে না। ৭ কোটি মানুষের মুক্তির দাবি দাবিয়ে রাখা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘জালেমের জুলুম যে বরণ করে, সে-ও মহাপাপী। জালেমের সহিত কোনো আপস নাই।’
এ জনসভায় বক্তব্য দানকালে জাতীয় লীগ সভাপতি, পূর্ব বাংলার সাবেক আওয়ামী লীগদলীয় মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান অবিলম্বে ‘বাংলায় জাতীয় সরকার’ গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাঙালির আজ আর কোনো দাবি নাই—সে চায় মুক্তির স্বাদ।’ জনসভার আগে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান। 
এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক (ইকবাল) হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় গৃহীত স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতীয় সরকার গঠনের অনুরোধ করা হয়। 
বাংলার সার্বিক স্বাধীকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির জন্য শেখ মুজিবুর রহমান আহূত অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে (৯ মার্চ) ঢাকায় সরকারি, আধাসরকারি ও সব আদালত কর্মচারী কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন। স্বাধিকার সংগ্রামে গত কয়েক দিনে নিহত শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধায় শোকাভিভূত নগরবাসী এদিন ঘরে ঘরে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনেও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। গত কয়েক দিনের সংগ্রামী ব্যস্ততার পর এদিন (৯মার্চ) সকাল থেকেই নাগরিক জীবনে ফের স্বাভাবিক তত্পরতা শুরু হয়। শেখ মুজিব ঘোষিত কর্মসূচি বাণিজ্যিক ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রে পূর্ণভাবে পালিত হয়।

No comments:

Post a Comment